বাবার নিষিদ্ধ প্রণয়

বাবা (জুন ২০১২)

কামরুল হাছান মাসুক
  • ৩১
  • ১৯৬
আমি আপনাদের আজ এমন একটা গল্প বলব, আপনারা বিশ্বাস করলেও করতে পারেন, না
করলেও করতে পারেন। তবে গল্পটি সত্য। গল্পটি নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া চরম একটি
সত্য গল্প। আমার নাম ছিল নূরজাহান। মা নূরজাহান বলেই ডাকত। মায়ের ভিতর গ্রাম্য
এবং সহজ সরল একটা ভাব ছিল। তাই মায়ের নামের ডাকের মধ্যে ও কিছুটা আবাস
পাওয়া যেত। বাবা মীম নামে ডাকত। মীম নাকি অনেক আধুনিক নাম। মা নূরজাহান বাবা
মীম নামেই ডাকত। আত্রীয় স্বজনদের মধ্যে মায়ের যেহেতু প্রাধান্য বেশি তাই মায়ের
নামেই আমার নাম করণ হয়ে যায়। মানে সবাই আমাকে নূরজাহান নামেই চিনে। তবে
বাবা কখনোই আমাকে নূরজাহান বলে ডাকে নি।
বাবার কিছু স্বভাব ছিল যা সবার কাছেই খারাপ লাগত। তিনি বাড়িতে আসতেন খুব কম।
ব্যবসা নিয়েই তিনি ব্যসত্দ থাকেন। উনার বিরুদ্ধে বড় ধরনের একটা অভিযোগ ছিল তিনি
মেয়েদের সাথে রাত কাটাতেন। উনার নাকি অনেক স্ত্রী। স্ত্রী ছাড়াও অনেক মেয়েদের সাথে
উনার নাকি অবৈধ সম্পর্ক ছিল। উনি নাকি র্যাম মডেলের সাথে ঘুরে বেড়ান। নাইট ক্লাবের
পার্টিতে যান। মদ বেয়ার খান।
উনার সম্পর্কে ভাল কতগুলো গুনও আছে। উনি নাকি সবাইকেই মনোমগ্ধ করতে পারেন।
সবার সাথে অতি সহজেই মিশতে পারেন। সবার সাথে মিশতে পারার ক্ষমতা অবশ্য বিশ্বাস
করতে হয়। আমার বান্ধবীরা একবার এসেছিল। বাবা তাদের সাথে এত মিশে গিয়েছিল যে
বান্ধবীরা ভাবতেই পারে নি উনি আমার বাবা। সবাই ভেবেছিল উনি আমার মামা হবেন
হয়ত। তাই সবাই উনাকে মামা বলেই সম্মোধন করেছে। বাবা ও কোন কিছু বলেনি। পরে
আমি যখন বাবাকে পরিচয় করিয়ে দেই তখন তাদের কি লজ্জা। তারা বের হতে পারছে না
আবার বাবার সামনে বসে থাকতেও পারছে না। ঐ লজ্জার হাত থেকে তাদেরকে বাবাই
উদ্ধার করেছিল। সবার সাথে বসে কি সুন্দর আলাপ। সবাই ভূলেই গেল কিছুক্ষণ আগে
তাদের কি পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছে।
মা অবশ্য বলেন, তোর বাবা লোভী। মেয়েদের গায়ে শরীল ঘষার জন্যই উনি এমনটা
করেন। এই স্বভাবটার জন্যই ঐ লোকটাকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। মেয়ে দেখলে
উনি লোভ সামলাতে পারেন না। কুকুরের মত জিহ্বা বের করে তাকিয়ে থাকেন।
আমার কাছে এরকম মনে হয়নি। তবে আমি বাবাকে ভালবাসি।
আরেকটা বিষয় উনার মধ্যে এমন কতগুলো গুন ছিল, যে গুলো দিয়ে উনি যেই কেউকেই
আকৃষ্ট করতে পারেন। এমনকি মাকেও। মা বাবার পিছনে পিছনে যতই কথা বলুক না কেন
সামনা সামনি কোন কথা বলে না। এমনকি বাবার কোন কাজেও বাধা দেয় না। বাবাকেও
কোনদিন দেখি নি উনি উনার কোন মেয়ে বান্ধবী অথবা স্ত্রীদের এই বাড়িতে আনতে। মা ও
বাবাকে এই বিষয় নিয়ে সরাসরি কোনদিন প্রশড়ব করতে শুনি নি।
যাহোক বাবার সাথে আমার বোঝা পরাটা অনেক ভাল। বাবা আসলেই আমার রুমে পড়ে
থাকে। সিগারেট খায়। ব্যবসায়িক কথা বার্তা বলে। এককথায় বন্ধুর চেয়েও বেশি। যখন
যা চাই তাই দেয়। কোন ছেলে বন্ধুর সাথে কথা বললেও বাবার সামনে বলা যায়। বাবা
এসব নিয়ে কোনদিন প্রশড়ব করে না। মাঝে মাঝে ব্যবসায়িক অনেক জিনিস শেয়ার করে যা
অন্য কারো সাথেই করে না। মায়ের সাথে তর্কাতর্কি বা জগড়া হতে কোনদিন দেখি নি।
তবে এটিও দেখিনি মা এবং বাবা একসাথে বসে নিরবে রোমান্স করছে। আমার মনে হয়
বাবার সাথে মায়ের বোঝাপড়াটা তেমন ভাল না। এই জন্য আমাকেই তারা দুজনই
অবলম্বন করে থাকে। বাবা যেমন বাড়িতে থাকলেই আমাকে নিয়ে মেতে থাকে তেমনি মাও
আমাকে নিয়ে মেতে থাকতে চায়।
তবে বাবার সানিড়বধ্য যেমন ভাল লাগে তেমনিভাবে মায়ের সানিড়বধ্য আমার কাছে ততটা বিরক্ত
লাগে। বাবার বিষয়গুলো সবগুলোই কেমন জানি মনে হয় নতুন নতুন কিছু শিখছি। মায়ের
বিষয়গুলোকে দেখলে মনে হয় এগুলো আগেই ছিল। বাবার কার্যকলাপ গুলো চোখে তেমন
পড়ে না। মায়ের কার্যকলাপগুলো চোখে বার বার পড়ে এবং মায়ের সানিড়বধ্য খুব কম পেতে
ইচ্ছে করে। বৈজ্ঞানিক ভাবেই নাকি প্রমানিত মায়ের প্রতি ছেলেদের টান বেশি থাকে।
বাবার প্রতি মেয়েদের টানা বেশি থাকে। এটা সত্যি হলেও হতে পারে। আমার টান
সবচেয়ে বেশি বাবার প্রতি। যখন সবার কাছ থেকে শুনি বাবার চরিত্র তেমন ভাল না তখন
নিজের কাছে খুব খারাপ লাগে। বাবাকে ঘৃণা করতে ইচ্ছে করে। আবার বাবা যখন সামনে
আসে উনাকে দেখে মনে হয় উনার মত এত নিষ্পাপ মানুষ হতেই পারে না। সবকিছু কেমন
জানি মুহুর্তেই ভূলে যাই।
বাবা মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে না গেলেও আমাকে নিয়ে ঠিকই যেত। এখানে একটা কথা
বলে রাখা ভাল বাবা ছিল খুবই সুদর্শন। বয়স চলি্#৮৭২২;শ পয়ঁতালি্#৮৭২২;শ হবে। তবে উনাকে দেখতে
ত্রিশ বছরের মত দেখায়। যে কোন মেয়েকে পাগল করার জন্য শরীলের পাশাপাশি উনার
কণ্ঠও ছিল অনেক সুন্দর।
আগের কথায় আসি, বাবা আমাকে নিয়ে বের হলে বাবার চিনা পরিচিত অনেক মানুষই ভুল
করত। আমাকে ভাবি বলে সম্মোধন করত। সাথে সাথে বাবা ভুল শুধরিয়ে দিত। যারা ভুল
বলত, তাদের মুখে লজ্জার এরকম একটা ভান থাকত যে, খুন করার মত অপরাধ করে
ফেলেছে। বাবা কিন্তু বিষয়টা সহজভাবে নিত এবং যে বলেছিল তার লজ্জাটাকে বিভিনড়ব
কথাবার্তা বলে ভূলিয়ে দিত।
আরেক দিনের একটা ঘটনা বলি, একটা ছেলে আমাকে প্রেমের প্রসত্দাব দেয়। ছেলেটাকে ও
আমার ভাল লাগে। বাবাকে বললে বাবা বলে, তর ভাল লাগলে আমারও ভাল লাগবে।
তবে বয়স তেমন বেশি হয়নি সুতরাং এরকম কোন কাজ করিস না যাতে করে তর জীবনটা
ধ্বংস হয়ে যায়। আমার মনে হয় কি জানিস, তর মত বয়সটাতে মেয়েরা না বুঝেই প্রেমের
সাথে জড়িত হয়ে যায়। প্রেমটা কিন্তু এরকম না। একজন প্রসত্দাব দিল। তাতে সাড়া দিলি,
তাতেই প্রেম হয়ে যায় না। প্রেমটা মনের ভিতর থেকে আসতে হয়। দুটি মনের মিলন
ঘটতে হয়। একজনের ভাল লাগার সাথে অন্য জনের ভাললাগার অধিকাংশই মিল থাকতে
হয়। যার সাথে প্রেম করবি তার আচার-আচরণ, ভাবভঙ্গি দেখতে হবে। যদি ভাল লাগে।
ছেলেটা যদি কোয়ালিফাইড হয় তাহলে আমার কোন সমস্যা নেই। তবে এখন এগুলোর
দিকে মন না দেওয়াই ভাল।
মা মীম আস, তাস খেলবি। তর সাথে তাস খেলতে অনেক মজা। কয়েকদিনের মধ্যে শিখে
ফেললি। মাঝে মাঝে যা খেলিস না। দেখলে মনে হয় তুই সত্যিকারের জোয়ারি।
বাবা তুমি তাহলে আমাকে না করছ।
না করব কেন। ছেলেটাকে একটু বিচার-বিশ্#৮ে;৭২২;ষন করতে বলেছি। এটাও যদি করতে না চাস
তাহলে তুই যেটি ভাল মনে করবি তাই হবে। জীবনটা তুর, আমি তকে সর্বোচ্চ গাইড
লাইন দিতে পারি। জীবনে যদি কষ্ট করতে হয় তাহলে তুই করবি। আমি করব না। যতদিন
বেঁচে থাকি মেয়ের সুখটাকে দেখতে চাইব। এটাই নিয়ম।
বাবা তাহলে তুমি আমার সাথে কাল যাবে। ছেলেটার সাথে কথা বলবে। তোমাকে চিনতে
পারবে না। তুমি ঠিক ছেলেটার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে। তুমি যে আমার বাবা সে
বুঝবেই না। তুমি দেখে আমাকে বলবে। কেমন।
কি দুনিয়া পড়লরে বাবা, মেয়ের প্রেমের পিয়নগিরি বাবাকে করতে হয়। ভবিষ্যতে আর কি
করতে হবে তা কে জানে।
বাবা তুমি একটু বেশি বল। তোমাকে আমার বাবা লাগে না। তোমাকে আমার মনে হয়
তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ট বন্ধু। তোমার মত এরকম বন্ধু আমার নেই। তোমার কাছে
সবকিছু শেয়ার করা যায়। তুমি অনেক ভাল।
কাঁদছিস কেন। বাবাকে একেবারে বন্ধুতে নামিয়ে ফেললি। কালকে দেখবি নাম বলেই ডাকা
শুরু করবি। পরের দিন বলে বসবি বাবা আমার ছেলে বন্ধু।
বাবা তোমাকে আর যেতে হবে না। তোমার মুখে কিছুই আটকায় না। বলতে শুরু করলে
ভরভর করে সব বলে দাও। এটা কিন্তু ঠিক না। মেয়ের সামনে অনেক কিছু গোপন করতে
হয়।
বাবা চলে গেলে ভাবি বাবাকে যে বললাম বাবা সবকিছু বলে। আসলেই কি বলে। তা ত
না। বাবা যে বিয়ে করেছে। বাবার অনেকগুলো স্ত্রী আছে। পতিতালয়ে যায়, নাইট ক্লাবে
যায় এগুলো আমাকে কোনদিন বলে নি। আমার ও প্রতিদিনই মনে হয় বাবাকে বলব, বাবা
আসলে তা আর মনে থাকে না।
নূরজাহান আমার একটা কথা রাখবি। তর বাবা কিন্তু ভাল না। সে পারে না এমন কোন
কাজ নেই। তুই ওর সাথে বেশি মিশবি না। দেখবি তকেও কিছু একটা করে ফেলতে
পারে। দিন দিন বড় হচ্ছিস এটা একটু হিসাবে রাখিস।
আমার ঘৃণায় মাকে মারতে ইচ্ছে করছে। তবুও নিজেকে সামলিয়ে বললাম, মা বাবা এত
খারাপ না। তুমি যে রকম বাবাকে মনে কর বাবা এরকম না। তুমি কোন কিছুকে ভালভাবে
নিতে পার না। এটা তোমার একটা বিরাট বড় সমস্যা।
একবার ফুফু আসে। ফুফুর সাথে কথা প্রসঙ্গে বাবার চরিত্র নিয়ে প্রশড়ব উঠে। ফুফু একপর্যায়ে
বলে, তর বাবার কোন বাচবিচার নেই। যাকে পায় তাকে ধরে বসে। এই লোকটা এত শক্তি
পায় কোথায় থেকে সেই জানে। একবার হয়েছে কি তর বাবা আমাকে কুলে নেয়। আমি
বিষয়টা বুঝতে পেরে চিৎকার করি। তর বাবা ভয়ে চলে যায় আর কোনদিন আমার সাথে
কথা বলার সাহসই পায়নি। আপন বোনকেও ছাড় দেয় না। আরেকবার রাতের বেলায় তর
খালার ঘরে ঢুকে। অন্ধকারে তর খালার পায়ে পারা পড়ে যায়। নয়ত উনিও ঐদিন শেষ
ছিল। তর বাবার কথা বলিস না। প্রমে প্রমে আদর দিয়ে কাছে টানবে। এমন ভাব
করবে উনার মত মানুষই হয় না। বন্ধু থেকে অন্ধরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। তারপর সুযোগ বুঝে
কাজ শেষ করে ফেলবে।
আমি দ্বিধাগ্রসত্দ হয়ে গেলাম। সবাই বাবার সম্পর্কে এরকম কথা বলে। আমার কাছে তা মনে
হয় না। তবুও সন্দেহ যায় না। কারণ পত্রিকায় পড়েছিলাম অস্ট্রিয়াতে নাকি এরকম একটা
ঘটনা ঘটেছিল। মেয়েকে ষোল বছরের মাথায় অপহরন করে নিয়ে যায়। তারপর মাটির
নিচে ঘর বানিয়ে বিশ বছর আপন মেয়ের সাথে নোংড়ামি করে। প্রায় বিশ বছর পর ঘটনাটি
প্রকাশ হয়। এতদিনে মেয়েটির সাত সাতটি বাচ্চা আছে। আপন বাবা এই কাজটি করতে
পারে। কি অসভ্যতা, কি পিচাসিকতা, বর্বর, মনুষ্যরুপি জানোয়ার। এতে করে আমার মনে
সন্দেহটা ঢুকে যায়। সবাই যখন বলে হতেও পারে।
কিরে মীম দূরে দূরে থাকিস মনে হচ্ছে। কি বাবার প্রতি কোন কারণে কি রাগ করেছিস।
না বাবা। এমনিতেই। বড় হয়ে যাচ্ছি না। বাবার উপর সবসময় নির্ভরশীল থাকলে জীবন
চলবে।
মেয়ে মনে হচ্ছে অনেক কিছু শিখে ফেলেছ্।ে বাবার কাছে কিন্তু সবসময়ই মেয়ে যত বড়ই
হোক ছোটই থাকে। আমার কাছে তুই কখনো বড় হবি না।
আয় তাস খেলি। তর প্রেমের গল্পটা বলি।
না বাবা। আজ পারব না। অন্যদিন শুনব।
আমার নিজের খুব খারাপ লাগতে থাকে বাবার সাথে গেলে সময়টা অনেক ভাল কাটত।
বাবাকে এরকম না করা উচিত হয়নি। আবার ভাবি এটাই হয়ত বাবার কোন চাল। বাবা
এরকম ভাবেই মেয়েদের মুগ্ধ করে। আমিও বাবার সব আচরণেই মুগ্ধ্। এটাই মনে হচ্ছে
আমার শেষ সময়। এই সময়টাতে বাবার কাছ থেকে সরে না আসতে পারলে সর্বনাশ যা
হবার হয়ে যাবে।
বাবা সম্পর্কে এরকম ভাবছি নিজের মনেই খারাপ লাগছে। না ভেবে উপায় ও নেই। সবাই
যখন বলে তখন এরকম হতেই পারে। আপন বোনকে ও যে ছাড় দেয় নি তখন মেয়েত
দূরের কথা।
বাবার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে থাকি। আমার খুব কষ্ট হয়। বাবার কি হয় তা বলতে
পারব না। কারণ উনাকে কোন সময়ই দেখে মনে হয় না উনি কোন বিষয় নিয়ে চিনত্দা
করছেন বা আধো কিছু ভাবছেন।
বাবা হয়ত বিষয়টি টের পায়। আমার নাগাল না পেয়ে বাবা বাড়িতে আসা কমিয়ে দিল।
বাড়িতে আসলেও বারান্দায় বসে সিগারেট টেনে বসে থাকে। বাবাকে আমি চুপিসারে
দেখি।
মা আমাকে ডেকে বলেন, তকে বলেছিলাম না তর বাবা তর প্রেমে পড়ে গেছে। আগে কি
রকম আসত দেখতিস এখন উনি আসেই না। তুই মনে হয় পাত্তা দেস নি। তাই আরেকজন
নাগর যোগার করে নিয়েছে।
মনে মনে ভাবি নাগর হবে না। নাগরানী হতে পারে। মা লিঙ্গতে বেশি ভূল করেন মনে হয়।
দেখছিস তুই সাক্ষাত জমের হাত থেকে বেঁচে গেলি। একটা কিছু মানত করে ফেল।
এরকম বাঁচা কেউ বাচে না। তুই ভূলেও তর বাবার কাছে যাবি না।
মায়ের কথাগুলোকে আমারও সত্যি মনে হয়। বাবা সত্যিই বাড়িতে আসা একেবারে কমিয়ে
দিয়েছে। খুব কমই আসে। আমি যেহেতু বাবার কাছে যাই না। বাবা আমার রুমে আসে।
কি লাগবে, কি করছি এগুলো বলে উনি চলে যান। আমার মনে হয় উনিও বিষয়টা নিয়ে
চিনত্দায় আছেন।
মা আমাকে ছেড়ে কোথাও যায় না। একমাত্র কারণ বাবাই। আমাকে ঘরে একা পেয়ে যদি
কিছু করে বসে। কি আজব চিনত্দা করুন। তাও নিজের বাবা সম্পর্কে।
বাবা আমাকে কলেজ থেকে অনেকটা জোর করেই নিয়ে যায়। আমি ভয়ে একেবারে কাঠ
হয়ে যাই। সারা রাসত্দা একটা কথাও বলি না। চিৎকার দিব ভাবছি। আবার পারছি ও না।
ফুফুর কথা মনে পড়ল। ফুফু হলে এতক্ষন চিৎকার দিয়ে মানুষ জমিয়ে ফেলত। গাড়িতেই
বাবা আমার গায়ে হাত রাখলেন। আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মনে হতে থাকে এখনই
মারা যাব।
মারে তুই আমাকে কি ভাবিস। আমি তুর বাবা। এতদিন আমাকে দেখিস নি। আমার মধ্যে
খারাপ কোন কিছু দেখতে পেয়েছিস। হঠাৎ করে তুই এরকম করছিস কেন।
মুখ ফসকে বের হয়ে যায়। তোমার বোনকে তুমি কুলে নিয়ে কি করতে চেয়েছিলে।
এই কথা। তুকে আমি অনেক আধুনিক ভেবেছিলাম। তুই এটা বিশ্বাস করবি আমি ভাবতেই
পারছি না। বিষয়টা হয়েছে ভুলবোঝা বুঝির মাধ্যমে। আমি যাকে ভালবাসি তার সাথে বেশি
ফ্রি হয়ে যাই তখনই বিপত্তি ঘটে। বাংলা ছবির বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। সে মডেল হবে
আমাকে বলেছিল। আমি মজা করে বলেছিলাম বাংলা ছবির নায়িকা এবং মডেল হতে হলে
মোটা হতে হয় এবং ওজনে ভারি হতে হয়। সে বলল, সে ওজনে ভারি। তখন আমি তাকে
কুলে নিয়ে বিষয়টাকে নিয়ে মজা করতে চাইছিলাম। তারপর বাকিটা তুই জানিসই।
তাহলে খালার ঘরে রাতে গিয়েছিলে কেন।
মাঝরাতে আমার বাথরুম পায়। বাথরুমটিতে যেতে হলে তর খালা যেই ঘরে গুমিয়েছিল
সেই ঘর অতি্#৯৫৬;ম করেই যেতে হয়। আমি ঘরটি অতি্#৯৫৬;ম করে যাচ্ছিলাম। তখন পাঁয়ের
সাথে পাঁ লাগল। বাকি আর কি বলব।
ভয় কিছুটা কমে গেল। তারপরও ভয় যায়নি। বাবা আমাকে নিয়ে একটা বাসায় প্রবেশ
করল। গিয়ে দেখি মেয়ে আর মেয়েতে ভর্তি। ভয়ে আমার শরীল রক্তশূন্য হয়ে যায়।
ভাবতে থাকি এখনই মারা যাব। কি ভয়ংকর অবস্থা। একসাথে এতগুলি মেয়ে।
বাবা আমাকে বসতে বলল, মা বস। এরা সবাই আমার মেয়ে। এখানে প্রায় দুইশ মেয়ে
আছে।
কি বলে লোকটা। দুশ মেয়ে। এতগুলো বিয়ে কখন করল। বাচ্চাগুলিই কখন জন্মাল।
মেয়েদের সাইজ গুলিও মনে হচ্ছে একই। তাহলে উনি কি দুশ বিয়ে একসাথে করেছেন।
এরকম হয় নাকি। এখন পর্যনত্দ যে বেঁচে আছি তাই অবাক করা বিষয়। ফুফু এবং মা যা
বলেন তার থেকে মনে হচ্ছে অনেক খারাপ। এই লোকটা সম্পর্কে আমার আগেই সর্তক
হওয়া উচিত ছিল।
মারে তর বোঝার মত বয়স হয়েছে। এতগুলো মেয়ে যে দেখছিস একটা ও আমার নিজের
মেয়ে না। এই মেয়েগুলি কেউ এতিম, কেউ বিধবা, কেউ পতিতা। তাদের সমাজে কোন
জায়গায় স্থান নেই। আমি এই মেয়েগুলিকে এনে এখানে রাখি এবং তাদের চাকুরির ব্যবস্থা
করি। এখানে দুশ মেয়ে আছে, তাদের এক একজনের জীবনকাহিনী দিয়ে একটা ছবি হবে।
এদের কাহিনী তুই যদি ভাল করে শুনিছ তাহলে ঠিক থাকতে পারবি না। বসে বসে শুন।
আমার একটা কাজ আছে। কাজ শেষে তকে নিয়ে যাব।
ভয় মুক্ত হয়ে কয়েকজনের জীবনকাহিনী শোনার পরই চোখে পানি রাখতে পারলাম না।
বাবা এসে আমাকে নিয়ে গেল তার অফিসে। অফিসে গিয়ে দেখি বিভিনড়ব মেয়েতে ভর্তি।
বাসায় ফেরার পথে বাবা কাঁনড়বা বিজরিত কন্ঠে, মা তকে বিষয়গুলি খুলেই বলি। আমরা
অনেক গরীব ছিলাম। পড়ালেখা করেছি তর নানার বাড়িতে লজিং থেকে। লজিংয়ের
বিনিময়ে তর মাকে বিয়ে করতে হল। পড়ালেখা শেষ করে চাকুরির আশায় প্রতিটা দরজায়
দরজায় ঘুরেছি। মানুষের বিশ্বাস নাও হতে পারে। প্রায় পাঁচ হাজার দরজায় খানা দিয়েছি
একটা চাকুরির জন্য। চাকুরি না পেয়ে বাড়িতে চলে যাব ভাবছি এমন সময় একজন চা
বি্ে#৯৫৬;তার সাথে সাক্ষাত হল। তিনি আমাকে বললেন আপনি অনেক সুন্দর। আপনার
আপত্তি না থাকলে একজন পরিচালকের সাথে আপনাকে দেখা করিয়ে দিতে পারি। আমি
উনার সাথেই চলে গেলাম। পরিচালক আমাকে নিতে ইচ্ছুক না। তবুও জোর করেই থেকে
গেলাম। তাদের বিভিনড়ব ধরণের কাজকর্ম, খোটখরমাস শুনতে লাগলাম। পরিচালক কি মনে
করে আমাকে বলল তুমি কি সুন্দর সুন্দর মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
এরকম দুর্দিনে আমি রাজি হই। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেই। ঐ খান থেকে আগ্রহী মেয়েদের
বাছাই করে পরিচালকের কাছে নিয়ে আসি। ঐ খান থেকেই আসত্দে আসত্দে মডেলদের কালেক্ট
করে বিভিনড়ব পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দেই। তারা আমাকে এর বিনিময়ে অর্থ প্রদান করে।
এখন বিষয় হচ্ছে, মেয়েদের নিয়ে কাজ করি বলে তর মা আমাকে সন্দেহ করতে থাকে।
এই বিষয়টা সবার মাঝেই বিসত্দার করতে থাকে। আমি সন্দেহটা তেমন গুরুত্ব দেই না
কারণ আমাকে মডেলদের নিয়ে কাজ করতে হয় সুতরাং বিভিনড়ব ধরনের গুজব ছড়েই। তর
মাকে আমি বুঝাতে পারি না।
তর মা আমাকে এতটুকুই বলে, আমি যদি স্বীকার করি আমার স্ত্রী আছে, আমি মডেলদের
সাথে রাতে শোই। তাহলে আমার পথে কোন প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়াবে না এবং আমার
বিষয়ে কোন আগ্রহ ও দেখাবে না। শুধু সামাজিক স্বীকৃতির জন্য ঘর সংসার করবে।
আমি বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেই নি। প্রতিদিন জগড়ার চেয়ে মিথ্যা রাজি হওয়া অনেক
ভাল মনে করলাম। মনের শানত্দিটা হয়ত ঐ রকম পাওয়া যাবে না। অশানত্দিও পাওয়া যাবে
না ভেবে তর মায়ের কথাই রাজি হলাম। আরেকটা বিষয় হচ্ছে অর্থের কষ্ট হচ্ছে বড় কষ্ট।
মানুষ বলে না টাকা না থাকলে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালাই। আমি এই বিষয়টা বিশ্বাস
করি। পার্থিব ভালবাসা অর্থ ব্যতিত হয় না। সুতরাং এর পর থেকেই তর মা আমার সাথে
তেমন কথা বলে না।
আমি অনেক চেষ্টা করেছি বুঝানোর জন্য। তর মা কোনভাবেই বুঝতে চাইল না। আমি
কাজটি পর্যনত্দ ছেড়ে দেই। তারপরও কথা বলে না। এদিকে আমি অনেক অভাগা মেয়েদের
ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সাহায্য করছি। কাজ না করলে তাদের সাহায্য করব কি করে। এই
মেয়ে গুলিকে যেহেতু আমি এনেছি তখন আবার ফেলে ও দিতে পারছি না।
এখন দেখিস তুই যদি তর মাকে বুঝাতে চেষ্টা করিস তাহলে সে বুঝবে না। সে তর
সম্পর্কেও নোংরা নোংরা জিনিস ভাববে। হয়ত বলবেও।
বাবার চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে। যেই মানুষটাকে কোনদিন দেখি নি মন খারাপ
করতে। এই মানুষটির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এটা সপ্ত আর্শ্চযের মধ্যে একটি।
বাসায় এসে মাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কোন কাজ হল না। বাবা যেটি বলেছে
সেটিই ঠিক। উনি ভাবছেন, বাবা আমাকেও শেষ করে দিয়েছে। আমাকে করায়ত্ব করে
ফেলেছে।
এখন বুঝি আমার বাবা হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ট বাবা। উনি যে এত ভাল মানুষ সবাইকে বুঝাতে
পারলেও মাকে বুঝানো যাবে না। উনি উনার সন্দেহটা এমনভাবে আয়ত্ত্ব করে ফেলেছেন
যে, সেই সন্দেহ থেকে বের হতে উনার দ্বিতীয় বার জন্ম নিতে হবে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধায়
আমার মাথা নুয়ে আসে। তবুও বাবাকে সেলাম করতে পারি না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Afzal বাস্তব ধর্মী লেখা অনেক ভাল লেগেছে।
মিলন বনিক সুন্দর গল্প..ভাবনাটা অসাধারণ..বানাগুলো ফোনেটিক সমস্যায় পতিত...আপনার সত্য গল্পটি কেমন যেন অলৌকিক মনে হচ্ছে...খুব ভালো লাগলো..শুভ কামনা...
গল্পটা সত্য নয়। পাঠকে সত্য বোঝানোর জন্য এভাবে লেখা হয়েছে। ভাল লেগেছে জেনে অনেক ভাল লাগল।
এস.কে.দোয়েল লিখে যান। বাস্তবতা হয়তো একটু কঠিন। অভিনন্দন।
বাস্তবতা কঠিন কেন। একটু যদি বুঝিয়ে বলতেন তাহলে ধন্য হতাম। ভাল থাকবেন।
mahbub বাবাকে নিয়ে পড়া শেষ্ট্র গল্পগুলোর মধ্য একটি। অসাধারণ হয়েছে।
নিলাঞ্জনা নীল বেশ সময় নিয়ে গল্পটা পড়লাম খুব সুন্দর লিখেছেন...
মৌ রানী বেশী সন্দেহ ভালো না। গল্প লেখা সুন্দর। ভালো লাগলো।
ভাল লাগল জেনে অনেক ভাল লাগল।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ অনেক অনেক ভাল কামরুল ভাই । মুগ্ধ হলাম ।
রাজু আহমেদ সন্দেহ ভুল বুঝা। অন্যরকম ভাবনায় লেখা গল্প।
ধন্যবাদ রাজু অাহমেদ ভাই। ভাল লাগলো জেনে খুশি হলাম।

১৮ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪